‘গর্জন’ শব্দ থেকে ‘গাজন’ শব্দ এসেছে। গাজন চর্চার অন্যতম কেন্দ্র মুর্শিদাবাদ জেলার কান্দীর রুদ্রদেবের গাজন। কান্দীর রুদ্রদেব এই অঞ্চলের সবচেয়ে লোকপ্রিয় দেবতা। রুদ্রদেবের মূর্তি বুদ্ধমূর্তি। মহামহোপাধ্যায় সতীশচন্দ্র বিদ্যাভূষণ এই মূর্তি সম্পর্কে বলেছিলেন,” জেমোর রুদ্রদেবের মুর্তি বস্তুত শাক্যমুনি বুদ্ধদেবের মূর্তি”। জেমোকান্দী ও উদ্ধারণপুরে দুটি মুর্তি রয়েছে। সতীশচন্দ্রের মতে, উদ্ধারপূরণের বিগ্রহ ভৈরব মূর্তি। বৌদ্ধশাস্ত্রে এর নাম বজ্রভৈরবম হিন্দুশাস্ত্রে চন্দ্রচূড় বা রুদ্রভৈরব।
চৈত্রমাসের শেষদিকে রুদ্রদেবের গাজন বা বার্ষিক উৎসব হয়। ১৯ চৈত্র থেকে আরম্ভ হয় উৎসব। প্রতিদিন সন্ধ্যার পর রুদ্রদেব বেশভূষা করে দরবারে বসেন। ভক্ত ও দর্শকরা ঢাকের বাজনা বাজিয়ে মন্দিরে উপস্থিত হন। বেতনভোগী পূজক ও পরিচারকরা অনেকে আছেন, অবৈতনিক কর্মচারী আছেন।
গাজনের সময় ব্রত পালন করে সন্ন্যাসী হতে হয়, সন্ন্যাসীদের ভক্তা বা বক্ত বলে। ভক্ত হতে জাতিগত কোন বাধা নেই। রুদ্রদেবে সন্ন্যাসীরা নানাশ্রেণীতে বিভিক্ত, কর্মভেদে শ্রেণীভেদ। বিভাগগুলি হলঃ ১। কালিকার পাতা ২। মায়ের পাতা ৩। চামুণ্ডার পাতা ৪। লাউসেনের পাতা ৫। ধূলসেনের পাতা ৬।ব্রহ্মার পাতা ৭। জলকুমারির পাতা
প্রথম দিন সন্ধ্যাবেলায় ‘কাঁটা ভাঙা’ অনুষ্ঠান হয়। এইদিন কাঁটা গাছের ডাল দিয়ে শয্যা রচনা করে তাঁর উপর গড়াগড়ি দেন ভক্তরা। তৃতীয়দিন আবার কাঁটা ভাঙা হয়। ষষ্ঠ দিন সন্ধ্যার পর হয় ‘সিদ্ধিভাঙা’। নবম রাত্রিতে বিশেষ কতগুলি অনুষ্ঠানসহ ‘চোর জাগরণ’ হয়। গভীর রাতে ‘শাঁখ চুরি’ হয়। দর্শকের ভিতর থেকে একজন চোর ধরা পড়ে। বিচার শেষে তাঁর দন্ড হয় একটি মুদ্রা। শেষরাতে হয় ‘মড়া খেলা’। তবে মড়া খেলা সরকারি আদেশে বন্ধ রয়েছে।
ধর্মের গাজনের সাথে রুদ্রদেবের গাজন অনুষ্ঠানের বিশেষ সাদৃশ্য রয়েছে।