খবরের কাগজের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কেটে নিয়ে খাতায় সেঁটে রাখা ছিল তাঁর নেশা। বাড়িতে ছিল হাজার-হাজার বইয়ের লাইব্রেরি , ফেলুদার একমাত্র ভরসা ছিলেন সিধু জ্যাঠা। আর ইনি হলেন মুর্শিদাবাদের সিধু জ্যাঠা- জীবন্ত কিংবদন্তী, ঐতিহাসিক মুর্শিদাবাদ জেলার উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের সংগ্রাহক, ইতিহাসবিদ, গবেষক – রমাপ্রসাদ ভাস্কর।
তিনি যেন আজকের ইন্টারনেটের গুগল। হীরে থেকে জিরে – যখনই যার দরকার- পেয়ে যান তাঁর কাছে। যিনি একজন সুরের অনুরাগী, সঙ্গীতের অনুরাগী। শিল্প এবং সঙ্গীতের পরিবেশেই বেড়ে ওঠেন রাষ্ট্রপতি পুরস্কার প্রাপ্ত শিল্পী গৌড়চন্দ্র ভাস্করের ছেলে রমাপ্রসাদ ভাস্কর। জানার আগ্রহ থেকেই সঙ্গীত, সাহিত্যের প্রাচীন ধারা সংগ্রহের চেষ্টা শুরু করেন। সংগৃহীত রেকর্ড, পুঁথি জমতে জমতে তৈরি করেছেন এক সংগ্রহশালা।
যার প্রতিটি কোণেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ইতিহাস। ইমন থেকে ভুপালি, কলাবতি থেকে দরবারি কনাঢ়া- প্রায় ৮০০ রকমের রাগ সংগৃহীত রয়েছে সংগ্রহশালায়। সংগৃহীত রয়েছে গীতবিতানের রবীন্দ্রসঙ্গীত। সমস্ত তথ্য রয়েছে খাতায় তালিকাবদ্ধ। দেওয়াল জুড়ে রয়েছে নিজের হাতে আঁকা বড়ে গোলাম আলী খাঁ, উস্তাদ বিসমিল্লাহ খান, আব্দুল কলিম খাঁ, এনায়েত খাঁ, ভীম সেন যোশীর মতো- সঙ্গীত শিল্পের তলোয়ারদের ছবি। সংগৃহীত রয়েছে সঙ্গীত সম্রাজ্ঞীদের বিভিন্ন রাগ, রাগিনি, গান। রেকর্ড সংগ্রহ করতে করতে আজ ১৬ হাজার ঘণ্টা শোনানোর সঙ্গীতের ভাণ্ডার রয়েছে এই সুর শিল্প লোক সংগ্রহশালায়।
সঙ্গীতের প্রতি এই টান তাঁর বরাবরের। বিখ্যাত শিল্পীদের জীবনী পড়ে তাঁদের গান শোনার ইচ্ছেও বাড়তে থাকে । সেই থেকে শুরু হয় খোঁজ। রেডিও থেকে গান টেপবদ্ধ করা, টেপ থেকে সিডি। কালের বিবর্তনে বদলেছে অনেক কিছুই, বদলানোর সেই ইতিহাস যত্ন করে আগলে রেখেছেন এই মানুষটি। সঙ্গীতের সংগ্রহের অভ্যেসটাও রয়েছে একই। তাঁর কথায়, তিনি একজন মুগ্ধ শ্রোতা। মুগ্ধ হয়েই আগলে রেখেছেন তাঁর সংগ্রহকে। ধুলো জমা সেই গ্রামাফোন , আর কানে ভেসে আসা শারাফাত হোসেন খানের কণ্ঠে গোরক কল্যাণ রাগ, শহর বহরমপুরের বুকে খাগড়া অঞ্চলের বিদ্যারত্ন গলি-র এই বাড়ি যেন এক অন্য জগত। এই জগতের কারিগর রমাপ্রসাদ ভাস্কর। জীবনের ৭৩ টা বছর কাটিয়ে আজও বিভিন্ন বিষয়ের উপরে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন | মুর্শিদাবাদের লোকগাথা ও লোক শিল্পীদের উপরেও তাঁর চর্চা অব্যাহত।