Friday, December 20, 2024

সম্প্রীতির বেরা ভাসান

ভাদ্রের শেষ বৃহস্পতিবার বেরা ভাসান উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। ১৭০৪ সালে বেরা ভাসানের সূচনা করেছিলেন  বাংলা–বিহার–ওডিশার নবাব মুর্শিদকুলি খাঁ । তখন দিল্লির সম্রাট ছিলেন  আওরঙ্গজেব।  মুর্শিদাবাদ থেকে জলপথে বজরায় পাঠানো হত বাদশাহী  খাজনা। কিন্তু সেই সময়  জলপথে ছিল জলদস্যুর ভয়। জলের পীর বা দেবতা   হলেন খোজা খিজির বা খাওয়াজা খিজির। বিশ্বাস ছিল, জল সংক্রান্ত কোন বিপদ থেকে তিনিই রক্ষা করতে পারেন। খোজা খিজিরকে  সন্তুষ্ট করতেই  নদীর বুকে বেরা ভাসানোর প্রচলন হয় । সেই সময় ভেলায় থাকত  সোনা, চাঁদির প্রদীপ।  চক মিনারের আকারে সেজে উঠত ভেলা।  আতশবাজির আলোয় ভেসে যেতো  বেরা।

আজও মুর্শিদাবাদে  নবাবি নিয়ম মেনে পালিত হয় বেরা ভাসান।  কলার ভেলার উপর  বাঁশ, বাখারি, চাটাই দিয়ে তৈরি করা হয় বেরা।  মিনার, চক, গম্বুজ করার পর ঝিকমিকে অভ্রর পাতা দিয়ে সাজানো হয়। বাঁশের তৈরি ছোট ছোট খোপের মধ্যে সাজানো হয়  প্রদীপ।

ভাদ্র মাসের শেষ  বৃহস্পতিবার রাত দশটার পর ইমামবাড়ার সামনের ঘাটে ভাগীরথীর জলে ভাসিয়ে দেওয়া হয় বেরা।

শয়ে শয়ে প্রদীপ জ্বলে উঠতেই চারদিক রঙিন হয়ে ওঠে। একটু একটু করে বেরা ভাসতে ভাসতে এগিয়ে চলে, চারপাশ ততটাই উজ্জ্বল আলোকিত হয়। মুর্শিদাবাদের মানুষের কাছে, বেরা মঙ্গলের প্রতীক, সম্প্রীতির প্রতীক । বেরা ভাসতেই ভাগিরথীর পাড়ে থাকা হাজার হাজার সব ধর্ম–বর্ণের মানুষ একে অপরকে ভালবাসার আলিঙ্গনে জড়িয়ে ধরেন।

Hot Topics

Related Articles