মুর্শিদাবাদে যতগুলো জনপদ প্রত্যেকে জনপদের আলাদা কৃষ্টি আলাদা ইতিহাস। মুর্শিদাবাদের ইতিহাসের মাপকাঠি কেবল নবাবী আমল নয় তার থেকেও অনেক প্রাচীন এই জেলার ইতিহাস। মুর্শিদাবাদ জেলার সদর শহর বহরমপুর। সেখান থেকে মাত্র 30 কিলোমিটার দূরে আর একটি প্রাচীন জনপদের নাম কান্দি। কান্দির ইতিহাস অনেক প্রাচীন। চীনা পরিব্রাজক হিউয়েন সাঙ থেকে শুরু করে বৌদ্ধ ধর্মের ধর্মগুরু অতীশ দীপঙ্করের মত মানুষদের আনাগোনা ছিল এই অঞ্চলে।এই অঞ্চলের গাছের তলায় পুরনো মন্দিরে বৌদ্ধ আমলের প্রাচীন ব্যাসাল্ট পাথরের নানারকম মূর্তি পাওয়া যায় শুধু তাই নয় হিন্দু ধর্মের প্রাচীন নরসিংহ দেবের ব্যাসাল্ট পাথরের মূর্তি এই অঞ্চলে পাওয়া গেছে। মূর্তির নৃশংস চাহনি বিগ্রহের শিল্পীর পারদর্শিতার প্রশংসা আদায় করে, সারা বাংলায় নরসিংহ দেবের মূর্তি খুব বিরল, রক্ত দন্তিকার প্রাচীন পাথরের বিগ্রহ, ব্যাসাল্ট পাথরের নটরাজ মূর্তি, অষ্টভূজা চামুণ্ডা, হাজার বছরের প্রাচীন বুদ্ধমূর্তি, মেষ বাহন থাকা সরস্বতী। এইরকম এই অঞ্চলে প্রাচীন হিন্দু বৌদ্ধ দেবদেবীর মূর্তি এখানে ওখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে। তবে বেশিরভাগ মূর্তি ভাঙ্গা।পুরনো বই ঘাটাঘাটি করলে জানা যদু নামে একজন হিন্দু মুসলিম ধর্ম গ্রহণ করে জালালউদ্দিন নাম নিয়ে কান্দির প্রাচীন মন্দির ,হিন্দু এবং বৌদ্ধ স্থাপত্যে হামলা চালায় সালটা আনুমানিক ১৪০৯ – ১০ । বেশিরভাগ মূর্তি প্রায় ধ্বংসপ্রাপ্ত হলেও তার বেশির ঐতিহাসিক মূল্যায়ন করা সম্ভব হয়েছে কান্দির ইতিহাস প্রেমী একদল আন্তরিক মানুষের তাগিদে ।
এইরকম কয়েকশো প্রাচীন মূর্তি এবং তার ঐতিহাসিক গুরুত্ব যদি আপনার জন্য এক ছাদের তলায় সাজানো থাকে তাহলে কেমন হয়? কান্দি শহরের আচার্য রামেন্দ্রসুন্দর স্মৃতি সংগ্রহশালা সেভাবেই অপেক্ষা করছে আপনার জন্য!!!
মধ্যবঙ্গের কান্দি মহকুমার ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা নানা ধর্মীয় ঐতিহাসিক রহস্যে ঘেরা ঘটনার বিবরণ তার সাথে নিখুঁত ফটোগ্রাফ দিয়ে সাজানো এই মিউজিয়াম!
রুদ্ধশ্বাস ঐতিহাসিক বর্ণনা এবং নিখুঁত ফটোগ্রাফ গুলো আপনাকে পৌঁছে দিতে পারে ১০০০ বছর আগের কান্দিতে যার তৎকালীন নাম ফতেসিং পরগনা।
এছাড়া আচার্য রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদীর ব্যবহৃত জিনিসপত্র, কান্দির রাজবাড়ির ব্যবহৃত জিনিসপত্র,প্রাচীন চিকিৎসা সংক্রান্ত পুঁথি।নাসার বিজ্ঞানী কান্দির ভূমিপুত্র ড.বিকাশ রায়ের পুরস্কারপ্রাপ্ত গবেষণাপত্রের সংগ্রহ।
কবিরাজি চিকিৎসায় ব্যবহৃত কৃষ্ণমৃগের শিং পর্যন্ত সংগ্রহ আছে এই মিউজিয়ামে।
এই মিউজিয়ামের চৌকাট পেরোলে আপনার সময় কখন কেটে যাবে আপনি বুঝতে পারবেন না। এখানে আসতে হলে আপনাকে বহরমপুর থেকে কান্দির বাস ধরতে হবে।তারপর কান্দি বাসস্ট্যান্ডে নেমে টোটো কে “কালিবাড়ি রোড স্টেট ব্যাংক” বললেই বাস স্ট্যান্ড থেকে 7 থেকে 10 মিনিটের আপনি পৌঁছে যাবেন এই মিউজিয়ামে।
এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর মিউজিয়াম খোলা থাকে দুপুর 1 টা থেকে সন্ধ্যা 7 টা পর্যন্ত এবং অক্টোবর থেকে মার্চ মাসের দুপুর 1 টা থেকে সন্ধ্যা 6 টা পর্যন্ত। প্রতি শুক্রবার 3 টা থেকে সন্ধ্যে ছটা পর্যন্ত খোলা থাকে মিউজিয়াম। রবিবার বন্ধ থাকে মিউজিয়াম।এই মিউজিয়ামের ঢুকতে প্রবেশ মূল্য মাত্র পাঁচ টাকা।
মধ্য বঙ্গের বৌদ্ধ হিন্দু ধর্মের উত্থান পতন বিভিন্ন গুণী মানুষের ব্যবহৃত জিনিসপত্র দেখতে হলে হাতে কয়েকটা ঘন্টা নিয়ে বেরিয়ে যেতেই পারেন আচার্য রামেন্দ্রসুন্দর স্মৃতি সংগ্রহশালার উদ্দেশ্যে।