Tuesday, September 9, 2025

Murshidbad Silk:  মুর্শিদাবাদে রেশম কি আড়াই হাজার বছরেরও পুরানো ?

Murshidbad Silk  মুর্শিদাবাদের রেশমের ছিল জগৎ জোড়া খ্যাতি। একথা কে না জানে। কিন্তু কতো পুরানো মুর্শিদাবাদ সিল্ক ? তা নিয়ে রয়েছে বিস্তর বিতর্ক।   তবে ইতিহাস গবেষকরা দাবি করেছেন, খ্রিস্টের জন্মের প্রায় ৫০০ বছর আগে থেকেই মুর্শিদাবাদ জেলাঞ্চলের রাঢ এলাকায় রেশমি বস্ত্রশিল্পের চল ছিল।

“রেশম” শব্দটি এসেছে ফার্সি ভাষা থেকে। রেশম সুতো যে গুটিপোকা বা রেশমকীট থেকে পাওয়া যায় সেটা বোঝাতেই “রেশম” শব্দটি ব্যবহার করা হয়।

“মুর্শিদাবাদঃ দুয়ার হতে দূরে” বইতে  অধ্যাপক সৌমেন্দ্র কুমার গুপ্ত দাবি করেছিলেন, “ তুঁত রেশম আবিষ্কার চীন দেশে এবং সেখান থেকেই তা পারস্যে এসেছিল , আর পারস্য থেকে বাংলা”।

রেশম বা সিল্কের জন্ম নিয়ে প্রচলিত আছে এক দুর্ঘটনার গল্প। বলা হয়, ২৬০২ খ্রীষ্টপূর্বাব্দে সম্রাট  হোয়াঁতির চর্তুদর্শী রাণী সি-লিং-চি ( His- ling- shi)  একটি গাছের নীচে বসে চা খাচ্ছিলেন। সেই সময় একটা রেশমগুটি তাঁর চায়ের কাপে এসে পড়ে। চা খুব গরম ছিল বলে গুটির উপরের আঠাযুক্ত অংশটি গলে যায়। এই গলে যাওয়া গুটি থেকে রানীর নখেই উঠে আসতে থাকে  আসে সূক্ষ্ম সোনালী রংয়ের সুতো।  তাই এর নাম হয় “স্বর্ণসূত্র”  এবং সি-লিং-চি –র নাম হয় সুতোর রাণী (Queen of Textiles)।

চীনদেশ থেকেই  এই সিল্ক  সমগ্র পূর্ব-পশ্চিম এশিয়া ও ইউরোপে বাজারে আসে । আর যে পথে এই বাণিজ্য হত তার নাম হয় রেশম পথ বা সিল্ক রুট। এই সিল্করুটে ভারত একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হয়ে ওঠে। এর সূত্রেই তৃতীয় খ্রিস্টপূর্বাব্দে কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রে “চীন পট্ট” শব্দের উল্লেখ পাওয়া যায়।

সৌমেন গুপ্ত লিখছেন, “ভারতবর্ষে রেশম শিল্পের সূচনাকাল একটি বিতর্কিত বিষয়। বিতর্ক দুই ধরনের প্রথমত, ভারতে তুঁত রেশমের প্রচলন কবে হয়? দ্বিতীয়ত, অন্য প্রকারের রেশমই বা কোন সময় থেকে ভারতে পাওয়া যায়? প্রথম প্রশ্নের উত্তরে বলা যায় যে তূঁত রেশম ভারতে দুই বারে প্রচলিত হয় ।  খ্রিস্ট জন্মের অব্যবহিত পরে একবার তিব্বত থেকে ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় এবং দ্বিতীয়বার ত্রয়োদশ শতাব্দীতে মহম্মদ ঘোরির ভারত বিজয়ের পর পারস্য থেকে বাংলাদেশে । যে কারণেই হোক ভারতে প্রথমবারের তুঁত রেশমের প্রবর্তন বিশেষ সাফল্য লাভ করেনি ত্রয়োদশ  শতাব্দী ‘ থেকে দ্বিতীয়বারের জন্য  তুঁত রেশমের প্রবর্তন শুধু সফল বা স্থায়ীই হয়নি, বাংলাদেশে এবং মুর্শিদাবাদ জেলাঞলে তা অভূতপূর্ব উন্নতি লাভ করে । দ্বিতীয় বিতর্কের উত্তরে বলা যায় যে চীন দেশ থেকে প্রথমবার তুঁত রেশমের চাষ প্রবর্তনের বহু পূর্ব থেকেই -_ খ্রিস্টের জন্মের অনেক আগে থেকেই-_ ভারতে অন্য কয়েক ধরনের রেশম শিল্পের এঁতিহা বিদ্যমান ছিল। মনুস্মৃতি , মহাভারত, রামায়ণ, অর্থাৎ  ইত্যাদি গ্রন্থে  আমরা এই সকল বিভিন্ন ধরনের রেশমের পরিচয় পাই “কীটজ বস্ত্র” এই আখ্যান । আজও আমরা ভারতে তুঁত রেশম ছাড়া কয়েক প্রকার অ-তুঁত রেশমের দেখা পাই — তসর রেশম, মুগা রেশম এবং এরি বা এন্ডি রেশম। মুশিদাবাদের জেলাঞলের রেশম শিল্পের ইতিহাসে অ-তুঁত  তসর রেশমের ধারাটির প্রতি আমাদের বিশেষ ভাবে নজর দিতে হবে”।

তিনি আরও জানিয়েছেন, মুর্শিদাবাদ জেলার নিকটবর্তী বর্ধমান জেলার পান্ডু রাজার ঢিবিতে খননকার্যের সময় যে এক টুকরো কাপড় পাওয়া গিয়েছে তার সময় নির্ধারিত হয়েছে খ্রিস্টপূর্ব সপ্তম শতক। অনুমান করা হয় ওই সময়ের আগেই মুর্শিদাবাদ জেলাঞ্চলেও বয়নের প্রবর্তন ছিল। হরপ্পা মহেঞ্জদারো সভ্যতায়  নৌযান ও নৌবাণিজ্যের পরিচয় মিলেছে। এর থেকে সহজেই অনুমান করা যায় যে গঙ্গা যমুনা অববাহিকা থেকে নৌ-পথে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত ওই সময়েই যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল এবং দ্রাবিড়ভাষীদের প্রাধান্য এই দক্ষিণ পূর্বাঞলেও  স্থাপিত হয়েছিল। মুর্শিদাবাদ জেলাঞ্চল  এই অঞলের মধ্যেই পড়ে৷ এই কাঠামোর উপরই আর্যভাষীদের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হয়। দ্রাবিড়ভাষীরা হরপ্পা মহেঞ্জদারোয়  যে নগর সভ্যতা গড়ে তোলে তার ফলে অনিবার্যভাবে বাণিজ্য-বৃদ্ধি ঘটেছিল, নৌবাণিজ্যের প্রসার ঘটেছিল। পূর্বভারতে তার প্রভাব পড়েছিল। মনে হয় এই বাণিজ্যের প্রভাবেই বাংলার তথা মুর্শিদাবাদ জেলার বয়নশিল্পর উন্নতি ঘটেছিল চাহিদার বৃদ্ধির ফলে বস্তুবয়নে নারীর ভূমিকার বদলে পুরুষের ভূমিকার প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল৷ এই পরিবর্তন ঘটে গেছিল খ্রিস্টপূর্ব দশম থেকে খিস্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দীর মধ্যেই অর্থাৎ পাণ্ডুরাজার টিবিতে কাপড়ের টুকরোর পরিচয় মেলার অব্যবহিত আগে পরে।

এই কাপড়ের টুকরোটি কেমন ছিল? প্রত্নতাত্ত্বিক  পরেশ চন্দ্র দাশগুপ্ত  তাঁর  প্রাগৈতিহাসিক বাংলা গবেষণা গ্রন্থে জানিয়েছেন, “ মোরাম পেটা একটি গৃহতলের নিচের জমাট পরিবেশে আবিষ্কৃত হয়েছে শিমূল তুলোর সরু সুতায় বোনা শ্বেতবস্ত্রের বিছিন্ন অংশ। শিমূল তলো অথবা “সিল্ক কটন-এ বোনা বস্ত্রের  এই নমুনা ভারতীয় প্রত্ততত্ত্বের এক গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার রূপে গণ্য হবে।”

অনেকে দাবি করেছেন চীনা পরিব্রাজক হিউ এন সাং’এর রাঙামাটি ভ্রমণকালে সিল্কের চাষের প্রচলন ঘটে। তবে জানা যাচ্ছে, মুসলিম শাসন কালে মুর্শিদাবাদ সিল্কের বিকাশ ঘটে। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির হাত ধরে এই সিল্ক বিশ্বের বাজারে পৌঁছে যায়।

Hot Topics

Related Articles