দেবনীল সরকার,২৩ ডিসেম্বরঃ “আয়রন ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট খাচ্ছেন তো ? অন্যদের থেকে সারা দিন এক বেলা অতিরিক্ত আহার গ্রহণ করছেন তো ? গর্ভবতী মায়েদের সঙ্গে দেখা হলেই এই প্রশ্ন করতে হবে”, পড়ুয়াদের বললেন মুর্শিদাবাদের সিএমওএইচ ডাঃ সন্দীপ সান্যাল ।
“ গর্ভবতী অবস্থায় মায়েরা যা খাচ্ছে, সেটাই গর্ভস্থ শিশুও খাচ্ছে। মায়েদের বোঝাতে হবে যেন ভাত, ডাল, সবুজ শাক, ছোট মাছ খায়”, বললেন তিনি। কিন্তু এই বোঝানোর কাজ করবে কারা ? খুদে সাংবাদিকরা । উত্তর উঠে এল পড়ুয়াদের কাছ থেকেই।
বৃহস্পতিবার বহরমপুরে একটি অডিটোরিয়ামে উপস্থিত হয়েছিল মুর্শিদাবাদ জেলার ২৪ জন ছাত্রছাত্রী। যারা প্রত্যেকেই প্রতিবেদন, ছবি, ভিডিও ও বিভিন্ন মাধ্যমকে হাতিয়ার করে নিজেদের কথা বলতে চায়। সমাজকে চায় এগিয়ে নিয়ে যেতে।
তাদের সামনেই এদিন বক্তব্য রাখেন ডাঃ সন্দীপ সান্যাল । এছাড়াও আলোচনা করেন ইউনিসেফের পশ্চিমবঙ্গ শাখার গণসংযোগ বিশেষজ্ঞ সুচরিতা বর্ধন, ইউনিসেফের পশ্চিমবঙ্গ শাখার কমিউনিকেশন কনসালট্যান্ট অমিতাভ দাস সহ বিশিষ্টরা।
এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমেই বৃহস্পতিবার বহরমপুরে শুরু হল “ মিডিয়া অ্যাডভোকেসি প্রোগ্রাম উইথ কমিউনিটি ইউথ রিপোটার্স”। ইমাজিন সংস্থা এবং কলকাতা প্রেস ক্লাবের যৌথ উদ্যোগে ও ইউনিসেফ পশ্চিমবঙ্গের সহায়তায় এই প্রকল্পে স্কুলের পড়ুয়াদের সাংবাদিকতার পাঠ দেওয়া হবে।
এদিন এই উদ্যোগ সম্পর্ক বলতে গিয়ে ইউনিসেফের পশ্চিমবঙ্গ শাখার গণসংযোগ বিশেষজ্ঞ সুচরিতা বর্ধন বলেন, “ শিশুদের অধিকার নিয়ে শিশুরাই তো সব থেকে ভালোভাবে বলতে পারবে। সাংবাদিকসুলভ দক্ষতার সাথে নিজেদের কথা তুলে ধরলে সমাজ উপকৃত হবে”।
তিনি জানান, এই উদ্যোগের মাধ্যমে শিশুদের সাংবাদিকতার সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণার পাশাপাশি তথ্যনির্ভর ও সৃজনশীল লেখালিখি, আলোচনাকে উৎসাহ দেওয়া হবে। শিশুদের অধিকারগুলি নিয়ে পড়ুয়াদের সাথে বিস্তারিত আলোচনা করেন তিনি। সুচরিতা বর্ধন বলেন, “ শিশুদের জন্ম নেওয়া ও বেঁচে থাকার অধিকার , বৃদ্ধি ও বিকাশের অধিকার , সুরক্ষার অধিকার এবং অংশগ্রহণের অধিকার সুনিশ্চিত করতে সকলকেই এগিয়ে আসতে হবে। নিজেদের এলাকায় এই বিষয়গুলি কীভাবে রক্ষা করা হচ্ছে বা লঙ্ঘিত হচ্ছে সেটা কিশোর কিশোরীরাই বলতে পারবে”। তিনি বলেন, মানব উন্নয়নের নিরিখে যে সূচক গুলোয় আমরা পিছিয়ে সেই ক্ষেত্রগুলিতে এগিয়ে যাওয়ার রাস্তা খুঁজতে হবে। যে সূচকগুলিতে আমরা এগিয়ে, সেই এগনোর পদ্ধতি, বিভিন্ন প্রভাবশালী বিষগুলি সকলের সামনে তুলে ধরতে হবে।
এদিন ডাঃ সন্দীপ সান্যাল বলেন , বাড়িতে যে খাবার পাওয়া যায় তাতেই অনেক পুষ্টি। তবে খাবারের দিকে নজর দিতে হবে। মা ও শিশুর স্বাস্থ্য নিয়ে রয়েছে হাজার কুসংস্কার, ভুল ধারণা। সেই ভুল ধারণা ভাঙতে বাড়তি দায়িত্ব নেবে স্কুলের ছাত্রছাত্রীরাই। প্রথম দিনের আলোচনায় উঠে এসেছে মা ও শিশুর স্বাস্থ্য, বাল্য বিবাহ, কম বয়সে মা হওয়ার সমস্যা, পরিবেশ দূষণ থেকে টিকাকরণের মতো ইস্যু। ২৪ জন ছাত্রছাত্রীর মধ্যে অধিকাংশই খুব কাছ থেকে দেখেছে বাল্য বিবাহ, অপুষ্টির মতো সমস্যা। সেই অভিজ্ঞতাও তুলে ধরেছে তারা।
ছাত্রছাত্রীদের সাথে আলোচনায় ইউনিসেফের পশ্চিমবঙ্গ শাখার কমিউনিকেশন কনসালট্যান্ট অমিতাভ দাস বলেন, “ শুধু নিজেরা সচেতন হলে চলবে না। কখন কী খেতে হবে, কখন টিকা নিতে হবে সেটা বন্ধুদেরও বোঝাতে হবে। আশেপাশের মানুষকে বোঝাতে হবে”। এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন সারগাছি রামকৃষ্ণ মিশন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক স্বামী তপোনিষ্ঠানন্দ।
খাদ্যে ভেজাল নিয়ে এদিন পড়ুয়াদের সতর্ক করেন মুর্শিদাবাদের ফুড সেফটি অফিসার প্রশান্ত বৈদ্য। শুধু স্বাস্থ্য নয়, পুষ্টি নিয়েও ভুল ধারণা ভাঙতে পড়ুয়াদের উৎসাহ দেন পুষ্টিবিদ অন্তরা মুখার্জি। সাধ্যের মধ্যেই কীভাবে পুষ্টিকর খাবার পাওয়া যাবে তা চেনান ছাত্রছাত্রীদের।
এদিনের ছাত্রছাত্রীদের কথায় জানা গিয়েছে গ্রামে বেড়ে চলা বাল্য বিবাহ, অপুষ্টি নিয়ে চিন্তিত পড়ুয়ারাও । হরিহরপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী সোনালি দে বলেছেন, “আমাদের চোখের সামনে বন্ধুদের বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। বন্ধুরা ক্লাসে এসে কান্নাকাটি করছে, পড়াশোনায় ফিরতে চাইছে”। এই রকম ক্ষেত্রে কী ভূমিকা হবে সহপাঠীদের ? আলোচনায় উঠে এসেছে সমাধানের পথও।